ভেক্টর (Vector) হল এক ধরনের গাণিতিক রাশি, যা একটি নির্দিষ্ট দিক এবং মান দিয়ে প্রকাশ করা হয়। উচ্চতর গণিতে, বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, ভেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসএসসি উচ্চতর গণিতে ভেক্টর নিয়ে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হয়, যেমন ভেক্টরের গঠন, এর গাণিতিক ক্রিয়া, এবং বাস্তব জীবনে এর ব্যবহার।
ভেক্টর রাশির পাশাপাশি স্কেলার (Scalar) রাশিও আছে, যা শুধু মান দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং এর কোনো দিক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্কেলারের মধ্যে তাপমাত্রা বা ভর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেখানে দিক প্রয়োজন হয় না। তবে ভেক্টরের ক্ষেত্রে দিক গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গতিবেগ বা বল।
১. মান (Magnitude): ভেক্টরের দৈর্ঘ্য বা পরিমাণ।
২. দিক (Direction): ভেক্টরের সঠিক দিকে নির্দেশ করে, যেমন উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, বা পশ্চিম।
ভেক্টরকে সাধারণত একক ভেক্টরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যদি →A একটি ভেক্টর হয়, তবে এটি x-অক্ষ বরাবর i, y-অক্ষ বরাবর j, এবং z-অক্ষ বরাবর k উপাদানের মাধ্যমে লিখা যেতে পারে, যেমনঃ
→A=xi+yj+zk
১. শূন্য ভেক্টর: মান ০ হলেও এর কোনো নির্দিষ্ট দিক থাকে না।
২. একক ভেক্টর: মান ১-এর সমান এবং এর একক মান রয়েছে।
৩. সমান্তরাল ভেক্টর: একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থানরত ভেক্টর।
১. যোগফল: দুটি বা ততোধিক ভেক্টরকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া।
২. বিয়োগ: এক ভেক্টর থেকে অন্য ভেক্টর বিয়োগ করা।
৩. স্কেলার গুণ: স্কেলারের সাথে ভেক্টর গুণ করা।
৪. ডট প্রোডাক্ট: দুটি ভেক্টরের মান নির্ণয় করা।
৫. ক্রস প্রোডাক্ট: দুটি ভেক্টরের একটি নতুন ভেক্টর সৃষ্টি করে।
ভেক্টর গণিতের বিভিন্ন প্রয়োগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভেক্টর ব্যবহার করে গতি এবং বলের পরিমাপ করা যায়, যা পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল, এবং এমনকি কম্পিউটার গ্রাফিক্সেও প্রয়োজন।
এসএসসি উচ্চতর গণিতে ভেক্টর সম্পর্কে এই মৌলিক ধারণাগুলো জানতে হয়, যা উচ্চ স্তরের গণিত এবং বিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
-5
-6
4
1
-2
-2
-1
1
5
4
3
2
120⁰
90⁰
180⁰
0⁰
ˉp-ˉq-ˉr=0
ˉp+ˉq-ˉr=0
ˉp+ˉq+ˉr=0
ˉp-ˉq+ˉr=0
22
21
2
-2
20°
59°
70°
90°
-2
-1
1
√40Nm
√35Nm
√45 N-m
√55Nm
√3 units
2√3 units
4√3 units
3
110⁰
120⁰
150⁰
135⁰
60°
45°/2
45°
30°
15
20
10
None of them
40
45
50
60
5
4
3
2
1, 1
2, 3
1, 4
2, 4
দ্বিমাত্রিক (২-মাত্রিক) ও ত্রিমাত্রিক (৩-মাত্রিক) জগতে i , j , এবং k হল ইউনিট ভেক্টর, যা বিভিন্ন দিক নির্দেশ করে। এই ভেক্টরগুলো প্রতিটি অক্ষে একক মান (১) এবং নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়, এবং এগুলো ভেক্টরের দিক নির্ণয়ে সহায়ক।
দ্বিমাত্রিক বা ২-মাত্রিক জগতে, আমরা সাধারণত x -অক্ষ এবং y -অক্ষ ব্যবহার করি, যেখানে:
যেমন, যদি \vec{A} একটি দ্বিমাত্রিক ভেক্টর হয়, তবে এটি লিখা যাবে:
\vec{A} = x i + y j
এখানে x এবং y হল ভেক্টরের x -অক্ষ এবং y -অক্ষ বরাবর উপাদান, যেখানে i এবং j একক ভেক্টর হিসেবে কাজ করছে।
ত্রিমাত্রিক বা ৩-মাত্রিক জগতে, আমরা x -অক্ষ, y -অক্ষ এবং z -অক্ষ ব্যবহার করি, যেখানে:
যদি \vec{B} একটি ত্রিমাত্রিক ভেক্টর হয়, তবে এটি লিখা যাবে:
\vec{B} = x i + y j + z k
এখানে x , y , এবং z ভেক্টরের যথাক্রমে x -অক্ষ, y -অক্ষ, এবং z -অক্ষ বরাবর উপাদান, এবং i , j , k একক ভেক্টর হিসেবে কাজ করে।
১. ভেক্টর নির্দেশনা: i , j , k বিভিন্ন দিক নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ভেক্টরের সঠিক দিক নির্ধারণে সহায়ক।
২. জ্যামিতিক আকার: ভেক্টরের একক ভেক্টরগুলো বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিক প্রদান করে।
৩. ক্রস প্রোডাক্ট: i , j , এবং k -এর মধ্যে ক্রস প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ভেক্টরের পরিমাপ এবং দিক নির্ধারণ করা হয়। যেমন:
i \times j = k, \quad j \times k = i, \quad k \times i = j
এসব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে i , j , এবং k ভেক্টরের উপাদান এবং দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ত্রিমাত্রিক জগতের বিভিন্ন গাণিতিক সমাধানে অপরিহার্য।
একটি ভেক্টরকে i , j , এবং k দ্বারা প্রকাশ করার জন্য আমরা ত্রিমাত্রিক স্থান (3D space) ব্যবহার করি, যেখানে x , y , এবং z তিনটি ভিন্ন দিক নির্দেশ করে। এই তিনটি দিক বরাবর ভেক্টরের উপাদানগুলো i , j , এবং k একক ভেক্টর হিসেবে কাজ করে।
ধরা যাক, \vec{A} একটি ত্রিমাত্রিক ভেক্টর, যার উপাদান হলো x , y , এবং z । তাহলে, ভেক্টর \vec{A} কে প্রকাশ করা যাবে:
\vec{A} = x i + y j + z k
এখানে:
ধরা যাক, একটি ভেক্টর \vec{A} এর x -অক্ষ বরাবর মান 3 , y -অক্ষ বরাবর মান 4 , এবং z -অক্ষ বরাবর মান 5 । তাহলে ভেক্টর \vec{A} হবে:
\vec{A} = 3i + 4j + 5k
i , j , এবং k এর মাধ্যমে একটি ভেক্টরকে দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক জগতে প্রকাশ করা যায়। i হল x -অক্ষ বরাবর, j হল y -অক্ষ বরাবর, এবং k হল z -অক্ষ বরাবর একক ভেক্টর, যা ভেক্টরের দিক এবং মান প্রদর্শনে সাহায্য করে।
সমতলে ভেক্টরের অংশক বলতে বোঝানো হয়, একটি ভেক্টরকে x -অক্ষ এবং y -অক্ষ বরাবর বিভক্ত করা। সমতল বলতে ২-মাত্রিক স্থান বোঝানো হয়, যেখানে একটি ভেক্টরকে i এবং j একক ভেক্টরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। x -অক্ষ বরাবর অংশককে x -অংশক এবং y -অক্ষ বরাবর অংশককে y -অংশক বলা হয়। এই অংশকগুলো ভেক্টরের প্রকৃত দিক এবং মান নির্দেশ করে।
ধরা যাক, একটি ভেক্টর \vec{A} , যা x -অক্ষ বরাবর A_x এবং y -অক্ষ বরাবর A_y মান রাখে। তাহলে ভেক্টর \vec{A} কে x এবং y -অক্ষ বরাবর বিভক্ত করে প্রকাশ করা যায়:
\vec{A} = A_x i + A_y j
এখানে,
ধরা যাক, একটি ভেক্টর \vec{A} , যার x -অংশক 4 এবং y -অংশক 3 । তাহলে ভেক্টর \vec{A} প্রকাশ করা যাবে:
\vec{A} = 4 i + 3 j
ভেক্টর \vec{A} -এর মান বা দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে হলে, আমরা পাইথাগোরাস তত্ত্ব ব্যবহার করি:
|\vec{A}| = \sqrt{A_x^2 + A_y^2}
এই উদাহরণে,
|\vec{A}| = \sqrt{4^2 + 3^2} = \sqrt{16 + 9} = \sqrt{25} = 5
অতএব, ভেক্টর \vec{A} -এর মান বা দৈর্ঘ্য হলো ৫।
ভেক্টরের দিক নির্ণয় করতে হলে আমরা \tan \theta = \frac{A_y}{A_x} সূত্র ব্যবহার করতে পারি, যেখানে \theta হলো ভেক্টরের x -অক্ষের সাথে কোণ। উদাহরণস্বরূপ:
\tan \theta = \frac{3}{4}
\theta = \tan^{-1} \left(\frac{3}{4}\right) \approx 36.87^\circ
সমতলে একটি ভেক্টরকে x -অংশক ও y -অংশক হিসেবে ভাগ করা যায়, যা i এবং j একক ভেক্টরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই উপায়ে ভেক্টরের মান এবং দিক উভয়ই নির্ণয় করা যায়, যা সমতলে ভেক্টরের নির্দিষ্ট অবস্থান নির্দেশ করতে সাহায্য করে।
সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণ বলতে বোঝানো হয় এমন একটি সমীকরণ, যা একটি সরলরেখা বরাবর যেকোনো বিন্দুর অবস্থানকে প্রকাশ করে। সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণে একটি প্রারম্ভিক বিন্দু এবং একটি দিক নির্দেশকারী ভেক্টর ব্যবহার করা হয়।
ধরা যাক, একটি সরলরেখা দিয়ে যাওয়া কোনো বিন্দু A(x_1, y_1, z_1) এবং সরলরেখাটির সাথে সমান্তরাল একটি দিক নির্দেশক ভেক্টর \vec{d} = ai + bj + ck রয়েছে। তাহলে, সরলরেখার উপর একটি যেকোনো বিন্দু P(x, y, z) এর অবস্থান নির্ণয় করা যাবে নিচের সমীকরণের মাধ্যমে:
\vec{r} = \vec{a} + \lambda \vec{d}
এখানে,
ধরা যাক, একটি সরলরেখার প্রারম্ভিক বিন্দু A(1, 2, 3) এবং দিক নির্দেশক ভেক্টর \vec{d} = 2i + 3j + 4k । তাহলে সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণ হবে:
\vec{r} = (1 i + 2 j + 3 k) + \lambda (2 i + 3 j + 4 k)
এটি সরলীকরণ করলে পাই:
\vec{r} = (1 + 2\lambda) i + (2 + 3\lambda) j + (3 + 4\lambda) k
দ্বিমাত্রিক স্থানে, z উপাদান বাদ দিয়ে সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণ লেখা যায়। যেমন, যদি একটি সরলরেখা দিয়ে যাওয়া একটি বিন্দু A(x_1, y_1) এবং একটি দিক নির্দেশক ভেক্টর \vec{d} = ai + bj থাকে, তাহলে সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণ হবে:
\vec{r} = (x_1 i + y_1 j) + \lambda (a i + b j)
সরলরেখার ভেক্টর সমীকরণে একটি প্রারম্ভিক বিন্দু এবং একটি দিক নির্দেশক ভেক্টর ব্যবহার করে রেখার প্রতিটি বিন্দুর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এই সমীকরণ বিভিন্ন গণনায়, বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক এবং দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভেক্টরের গুণন বলতে দুটি ভিন্ন ধরনের গুণন বোঝানো হয়: ডট প্রোডাক্ট (স্কেলার গুণন) এবং ক্রস প্রোডাক্ট (ভেক্টর গুণন)। এদের প্রতিটি গুণন ভিন্ন গাণিতিক ফলাফল প্রদান করে এবং ভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।
ডট প্রোডাক্ট হল দুটি ভেক্টরের মধ্যে স্কেলার গুণন। এটি দুটি ভেক্টরের মান এবং তাদের মধ্যবর্তী কোণের উপর ভিত্তি করে একটি স্কেলার মান দেয়।
যদি দুটি ভেক্টর এবং হয়, তাহলে তাদের ডট প্রোডাক্ট হয়:
অথবা, ডট প্রোডাক্টকে কোণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়:
এখানে,
ধরা যাক, এবং । তাহলে তাদের ডট প্রোডাক্ট হবে:
ক্রস প্রোডাক্ট হল দুটি ভেক্টরের মধ্যে ভেক্টর গুণন, যা একটি নতুন ভেক্টর উৎপন্ন করে। এই নতুন ভেক্টরটি দুটি মূল ভেক্টরের সমতলে লম্বভাবে থাকে।
যদি দুটি ভেক্টর এবং হয়, তাহলে তাদের ক্রস প্রোডাক্ট হবে:
অথবা, ক্রস প্রোডাক্টকে কোণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়:
এখানে,
ধরা যাক, এবং । তাহলে তাদের ক্রস প্রোডাক্ট হবে: